Friday, December 17, 2010

এলিয়েনদের খোঁজে আর্সেনিক নির্ভর ব্যাকটেরিয়া

এলিয়েনদের খোঁজে আর্সেনিক নির্ভর ব্যাকটেরিয়া

এলিয়েন অর্থ ভিনগ্রহের প্রাণী। আর এই ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে পৃথিবীবাসীর কৌতূহলের শেষ নেই। ভিনগ্রহের এই প্রাণীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক কল্পকাহিনি। নাসার একদল গবেষকের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, কল্পকাহিনির সেই এলিয়েনরা খুব সম্ভবত পৃথিবীতেই বিরাজ করছে।
পৃথিবীর বাইশটি দেশের তেইশ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক লোকের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রতি পাঁচজনে একজন বিশ্বাস করে যে, এলিয়েনরা পৃথিবীতেই রয়েছে এবং তারা আমাদের মধ্যেই ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খোদ বিজ্ঞানীরাও এধরনের সম্ভবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না এবং এর সপক্ষে কিছু গবেষণালব্ধ যুক্তিও উপস্থাপন করেছে তারা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ভিন্ন কোনো গ্রহে নয়, পৃথিবীর বুকেই নিশ্চিত এলিয়েন খুঁজে পাওয়া যাবে। সম্প্রতি নাসার গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার জোসমাইট ন্যাশনাল পার্কের মনোলেকের তলদেশে সম্পূর্ণ অজানা এক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন, যা বেঁচে আছে আর্সেনিক খেয়ে। বিজ্ঞানীদের মতে, বিষাক্ত আর্সেনিকে বেড়ে ওঠা এই ব্যাকটেরিয়াই এলিয়েনদের খোঁজ দিতে পারে।
বাস্তবে, প্রাণীদের জন্য আর্সেনিক খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু গবেষণার এই ব্যাকটেরিয়াটি সেই বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিব্যি বেঁচে আছে। আর্সেনিকপূর্ণ সেই ভয়ঙ্কর বিষাক্ত পরিবেশে ব্যাকটেরিয়াটি সুন্দরভাবে টিকে রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে বাস করা প্রাণীদের দেহ ছয়টি উপাদান দিয়ে গঠিত। এগুলো হচ্ছে, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন, সালফার ও ফসফরাস। এ তালিকায় বিষাক্ত আর্সেনিকের নাম নেই। কাজেই বিষাক্ত আর্সেনিকে বেড়ে ওঠা এই ব্যাকটেরিয়াই এলিয়েনদের খোঁজ দিতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন।
২০০৯ সালে বিজ্ঞান সাময়িকী 'সায়েন্স'-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিন মার্কিন গবেষক জানান, পৃথিবীতে এক ধরনের প্রাণী রয়েছে, যারা ফসফরাসের পরিবর্তে আর্সেনিক ব্যবহার করে থাকে। এর প্রায় এক বছর পর গবেষণার সেই হাইপোথিসিসকে তারা প্রমাণ করে দেখালেন। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ফেলিসা ওলফ সাইমন, যিনি নাসার ফেলো হিসেবে কাজ করেন। গবেষকদের বাকি দুই বিজ্ঞানী হলেন, অ্যারিয়েল আনবার ও পল ডেভিস। এই গবেষণার যাবতীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে নাসা।
গবেষণা সম্পর্কে সাইমন বলেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আর কোথায় কী কী থাকতে পারে, তা জানার সম্ভবনাটি আমরা হঠাৎ করেই খুলে ফেলেছি।
ক্যালিফোর্নিয়ার যে লেকে ব্যাকটেরিয়াটি পাওয়া গেছে সেটি বেশ লবণাক্ত পরিবেশের এবং সেখানে আর্সেনিকসহ অন্যান্য খনিজ পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে উলেস্নখযোগ্য মাত্রায়। লেকের একেবারে তলদেশ থেকে জিএফএজে-১ নামের ঐ ব্যাকটেরিয়াটি সংগ্রহ করা হয়। এরপর ল্যাবরেটরিতে নিয়ে ব্যাকটেরিয়াটিকে একটি বোতলে রাখা হয়। উলেস্নখ্য, ঐ বোতলে সামান্য ফসফরাস ও প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক ছিল। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেল, ব্যাকটেরিয়াটি ঐ বিষাক্ত পরিবেশে বেঁচে আছে। বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাটি কয়েকবার রিপিট করে। আর প্রতিবারেই একই রকম ফল পাওয়া যায়। এ থেকেই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে, এটি হয়তো সাধারণ কোনো প্রাণী নয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া শক্তি সংগ্রহের জন্য আর্সেনিক ব্যবহার করে থাকতে পারে, ঠিক যেমনটি মানুষ করে থাকে অক্সিজেন সংগ্রহের মাধ্যমে। এবার পরীক্ষায় দেখা গেল এই ব্যাকটেরিয়াটি বেঁচে থাকার জন্য আর্সেনিকের উপর নির্ভরশীল।
গবেষকরা মনে করছেন, এ ব্যকটেরিয়াগুলো যেভাবে বিষাক্ত আর্সেনিককে অবলম্বন করে টিকে আছে, সেভাবেই অন্যান্য গ্রহের চরম প্রতিকূলতার মাঝে এলিয়েনদের জীবন গড়ে উঠেছে। ড. লুইস ডার্টনের মতে, ব্যাকটেরিয়া যদি আর্সেনিক মেটাবলিজম নিয়ে তৈরি হতে পারে, তবে সেখানে অন্যান্য প্রাণের উদ্ভব ঘটাও সম্ভব। তিনি বলেন, এলিয়েন অবশ্যই রয়েছে।
লিডস মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির গবেষক জন ইলিয়ট এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রাণীকূল শুধু নির্দিষ্ট কিছু সত্যের উপর বেঁচে থাকে না। এই আবিষ্কারের ফলে একটি সত্য বেরিয়ে আসবে যে, অন্য কোনো গ্রহে নয়, বরং এ পৃথিবীতেই এলিয়েনদের খুঁজে পাওয়া যাবে।
গবেষক পল ডেভিস জানান, তাদের এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন এক দ্বার উন্মোচন করল। তিনি আরো জানান, পৃথিবীতে আর্সেনিক নির্ভর প্রাণী একটি থাকার কথা নয়, বরং ভবিষতে আরো অনেক আর্সেনিক নির্ভর প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে।